বহুদিন পর আবার এই সিরিজে মুর্শিদাবাদের বিশিষ্ট শিল্পী মিজানুর খান-এর অনুভূতি।
পেশায় স্কুল শিক্ষক হলেও নেশায় চিত্রশিল্পী আর এটাই আমার গর্বের পরিচয়। নেশার পরশ লাগে সেই ছেলেবেলাতেই যখন সব কিছু দেখে সৌন্দর্যে বিস্মিত হতাম। পাখি ও পাখির বাসা, কাঠবিড়ালি, প্রজাপতি, ফড়িং, রঙিন মাছ, গাছ-গাছালি, আকাশ আর নদী আহার-নিদ্রা ভুলিয়েছে কতদিন।
মাটির খোলা দিয়ে মাটিতে ঘর, সূর্য, পাহাড়, পাখি, মাছ আঁকতে আঁকতে স্কুলের অঙ্কের খাতা, বাড়ির মেঝে, দেওয়াল, হাতের তালু কিছু বাদ থাকেনি। কত বকা খেয়েছি, কিন্তু ভালোবাসা কমেনি।
লালগোলা এম. এন. একাডেমির শিক্ষক রণেনবাবুর কাছে হাতেখড়ি। জঙ্গীপুরে যতীনবাবুর (‘জেঠু’ নামে খ্যাত) কাছে দীর্ঘদিন তালিম নিয়েছি। মনে পড়ে বাস ছুটে গেলে মাঝে মাঝে কুড়ি-একুশ কিমি বাবার উঁচু সাইকেলটায় এদিক ওদিক করতে করতে (সিক্স সেভেনে পড়া ছাত্র তখন) আঁকার ক্লাসে ছুটে গেছি। যাঁর সান্নিধ্যে প্র্যাকটিক্যাল ও থিওরি উভয় দিক থেকে জ্ঞান লাভ করি তিনি স্বনামধন্য শিল্পী ও শিক্ষক শ্রীপঞ্চানন চক্রবর্তী আর যাঁর হাত ধরে তৈলচিত্র, বিমূর্ত চিত্র অঙ্কন এবং ছবি চেনা, জানা, বোঝা ও চিত্ররস সাগরে অবগাহন করেছি তিনি আমার আত্মার আত্মীয় ধ্রুবজ্যোতি বরাট (টুকুদা)। বহরমপুর ও কলকাতার কিছু বড়মাপের শিল্পীর সঙ্গে যোগ থাকলেও আমার ঘরের কাছে মনের মানুষ কৃষ্ণজিৎদা ও তাঁর ‘উদ্ভাস’ আমার চিত্রভূবন ভরিয়ে তুলছে ক্রমশ। আমা র ছবিকথায় এঁদের স্থান সর্বাগ্রে।
ছবিকথায় ছবির নানান কথা মনে জাগে। জন্মের দশ-বারোমাস পরেই মাকে হারাই। বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই অভাব ব্যথা দিতে থাকে ক্রমশ। মা ও শিশু বিষয়ক ছবি ও ভাস্কর্য ভীষণ আকর্ষণ করতো। দেশি-বিদেশি বহু শিল্পীর এই বিষয়ের সৃষ্টি আমায় ছোট থেকেই আকর্ষণ করে। এই অভাববোধ ও আকর্ষণ থেকে কয়েকটি ছবি ও ভাস্কর্য করেছি, যেমন — অন্তদর্শন, অবলোকন, মা ও শিশু ইত্যাদি। দারিদ্র্য ও যন্ত্রণা ভীষণভাবে নাড়া দিত। বাস্তব ওই অভিজ্ঞতাকে আমার ছবিতে রূপ দিয়েছি, যেমন — একজিসট্যান্ট, জিজীবিষা, উত্তরণ, ব্যারিয়ার, জাস্ট এলস্ ইত্যাদি এই ধারার ছবি। জীবনের আরেক অনুভূতি প্রেমকে নিয়েও অনেক ছবি করেছি, যেমন — দোসর, দোঁহে মিলে, ও জীবনরে ইত্যাদি।
আর একটি বিষয় ঘুরে ফিরে আমায় ভাবায় তা হল — মুখোশ। মুখোশের আড়ালে যেমন যন্ত্রণা, অভাব, অসন্তুষ্টি, না পাওয়াকে লুকিয়ে রাখা যায় তেমনি আবার ভন্ডামি, নোংরামি, শয়তানি, অপরাধও মুখোশের আড়াল পেয়ে যায়। তাই মুখোশ পজিটিভ ও নেগেটিভ দুই অর্থেই আমার ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে। এই ধারার আন্ডার লেয়ারস ছবিটি বিড়লা চিত্রপ্রদর্শনশালা, কলকাতায় প্রদর্শিতও হয়েছে যা ২০১৩ সালের নভেম্বর সংখ্যায় দেশ পত্রিকায় সোহিনী সেনের লেখায় ধরা আছে। সংসারের জটাজালে আবদ্ধ সৃজনশীল হৃদয় সৃষ্টি যন্ত্রনায় আকুল হয়ে নিজেকে প্রকাশ করার বেদনায় আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে বারবার চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। এর প্রকাশ রয়েছে স্পিরিট ছবিটিতে। আরেকটি প্রিয় বিষয় আত্ম-প্রতিকৃতি অঙ্কন। নিজেকে চেনা-জানার শেষ নেই, মাঝে-মাঝেই আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে তারই সন্ধান করি। পেশাদার শিল্পী হতে পারিনি বলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে জমানো খসড়াগুলো থেকে কখনো প্রবল সৃষ্টিসুখের উল্লাসে ছবি আঁকতে বসে যাই।
স্কুলে ছাত্র পড়ানোর সাথে সাথে শিল্পের দায়ে একটি শিল্পকলা প্রতিষ্ঠান ‘সাত্ত্বিক — সৌল অফ্ আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করে শিল্পের চাষ করে যাচ্ছি। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আজ আর্ট কলেজে পাঠ নিচ্ছে ও সেরার সম্মানও পাচ্ছে। লালগোলার মতো প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত জায়গায় যা বিপ্লব বলে অনেকে মনে করেন।
শিল্পবোধ জাগুক সকল প্রাণে, শিল্পীত হোক সবকিছু, এই আশা রেখে সাঙ্গ করলাম আমার ছবিকথা।
মন ভরে গেলো। অব্যক্ত উচ্ছ্বাস চোখে-মুখে ,আমাতে হারালাম আমিই। কৃতজ্ঞতা জানাই ‘উদ্ভাস’ পরিবারকে।
লালগোলার শিল্পী সত্তার icon আপনি দাদা।
ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই । আপনার পথেই বেড়ে উঠুক লালগোলার শিল্প ভাবনা।
সত্যিই আপনার কোনো তুলনা হয়না স্যার। লালগোলা কে আপনি শিল্প ভাবনার দিক থেকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।। বিয়ের আগে থেকেই আপনার কাছে অঙ্কন শেখার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু বিয়ের পরেও সেটা হয়ে ওঠেনি।।
তবে এখন, আমার মেয়ে হওয়ার পরেও আমার ইচ্ছে আছে যে আমি আর আমার মেয়ে দুজনেই আপনার কাছে অঙ্কন শিখবো।।
কারণ শেখার কোনো বয়স হয়না।।😊
তিনি লালগোলার গর্ব,, ওনার সান্নিধ্যে আজও অনেক কিছু শিখতে চাই। ভালো থাকবেন ।
আপনি তো আমাদের লালগোলার গর্ব দাদা।
Ha apni toh amader inspiration ❤️…
লালগোলার মতো প্রান্তিক এলাকায় মিজানুর দা যে শিল্প বিপ্লব শুরু করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিয়মিত শিল্পচর্চামানুষের ভাবনাচিন্তার বিকাশ ও মানুষের চরিত্র গঠন করতে সহায়তা করে যেটা আমি মনেকরি এবং দিনরাত এক করে আমাদের মিজানুর দা লালগোলার মতো গ্রামীণ ক্ষেত্রে যে বিপ্লবের প্রসার করেই চলেছে এক উদাহরণ সমাজের কাছে। আমরা মিজানুর দার ছাত্র হিসেবে গর্বিত।
লালগোলার গর্ব তুমি। তোমার গর্বে গর্বিত আমরাও।
আমার মিজানুর ভাই লালগোলা তথা মুর্শিদাবাদের গর্ব। বর্তমান করোনা পরিপেক্ষিতে যেভাবে একের পর এক ক্যানভাসে জীবন্ত ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন, যা অতুলনীয় -প্রশংসনীয়। আমি মিজানুর ভাইয়ের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে গর্ববোধ করছি। ব্লক ,জেলা ,রাজ্য, একের পর এক ছড়িয়ে পড়ুক এই শিল্পীর শিল্পকলার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ ,এই শিল্পীকে যেন আরও মহান করেন এই প্রার্থনা করি।
Dada 1 tai khata bolbo..pntng manus k notun notun kore bare bare nijeke abiskar korar sujog dai…beche thakar rosod jogai…valo thakben..ay vabei chorcha chalia Jan