একটি ছবি আর সেই ছবি নিয়ে কিছু গদ্য। এভাবেই তুহিনশুভ্র বুনে ফেলেছেন নানা রঙের ছবির শব্দময় অ্যালবাম। চতুর্থ পর্ব।
পৃথিবীর সবচাইতে অনুগত ও প্রভুভক্ত প্রাণী বলা হয় সারমেয়কে। ইতিহাস যদিও বলে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ঘোড়াকেই প্রথম পোষ মানায়। লক্ষ্যণীয় হলো এই দুটি প্রাণীই শিল্পীর রঙ-তুলি-পেন্সিলে বারবার নানান ভঙ্গিমায় ধরা দিয়েছে। ঘোড়া ও সারমেয়কে বিষয় করে বিভিন্ন সময়ের শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন। এ ছবিতে দেখা যায় একটি ছুটন্ত সারমেয় মুখটা পিছনের পথের দিকে ঘুরিয়ে চিৎকার করে কিছু যেন বলতে চাইছে। হাঁ-মুখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে আপোসহীন ক্রোধ। নির্মেদ শরীরের ভাঁজে উঁকি দিচ্ছে দুঃসাহসী তেজ। এতটাই তীব্র সে চিৎকার যে ফুলে ওঠা পেশিবহুল গলা ফুঁড়ে দর্শকের কান পর্যন্ত পৌঁছে যেতে চাইছে। কার উদ্দেশ্যে তার এই চিৎকার? প্রভুরূপী সমস্ত মনুষ্য সমাজের প্রতি? যারা কেবল তর্কাতীত দাসত্বকে কদর করে, পুরস্কৃত করে? বহু যত্নে রক্ষিত সাধের প্রভুত্বের প্রতি হঠাৎ যদি কোন মনুষ্যেতর অনাস্থা প্রকাশ করে বসে, লালিত প্রভুত্বকে অস্বীকার করে বসে, তবে তার নসিবে গলাধাক্কা ছাড়া আর কী বা জুটতে পারে? তা সে প্রভুর যতই নুন ও লেড়ো খেয়ে অতন্ত্র প্রহরীর ডিউটি নিভাক না কেন! বলা হয় সীমাহীন প্রভুত্ব আর অমৃতর স্বাদ নাকি একই!
শিল্পী কি তবে এই অধীনতার করুণ দিকটি বারবার ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে চান? আবহমান দাসত্বের ক্ষততে নরম তুলির স্পর্শ বুলিয়ে শিল্পী হয়ত দিতে চান সাময়িক উপশম।
শিল্পী : পঞ্চানন চক্রবর্তী।