কার্টুন পত্রিকা ‘বিষয় কার্টুনের সম্পাদক লিখছেন নিজের কথা। পত্রিকা ও নানা বই সম্পাদনার কথা এবার বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়ের নিজের কলমে। লেখাটি আমরা দুটি সপ্তাহে ভাগ করে প্রকাশ করছি। আজ শেষ অংশ।
বিষয় কার্টুন আত্মপ্রকাশ করলো ‘কুট্টিসংখ্যা’-র মাধ্যমে। মজার একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিল তার ঠিক এক মাস আগে। কলকাতায় রটে গিয়েছিল কুট্টি মারা গেছেন; শেষে আজকাল থেকে ওরা যোগাযোগ করে জানতে পারে উনি দিব্যি বেঁচে। রসিক ব্যঙ্গচিত্রী এরপরই আজকালে একটা নিজের ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিলেন যে কুট্টি সাহেব নাইট গাউন পরে হাত তুলে বলছেন আমি বেঁচে আছি। সে ব্যাপারটা ওনাকে ফোনে বলাতে ওঁর কি হাসি! যাইহোক প্রথম যাত্রাতেই বিষয় কার্টুন বেশ নাম করে ফেললো, আজো কেউ কেউ কুট্টির সেই সংখ্যাটা আছে কি না জাতে চান। এখানেই শেষ নয়, এরপর বন্ধু প্রদীপের সঙ্গে ই-মেল মারফত কুট্টি সাহেবের চিঠি চালাচালি চললো বেশ কিছুকাল, ওনার প্রত্যেক মেল-এ আমি কেমন আছি ও নতুন কি কাজ করছি জানতে চাইতেন। পত্রিকার সংখ্যা এক কপি ওনাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই কিন্তু উনি তার লেখাগুলো পড়তে পারেননি, ছবিগুলো তারিফ করেছেন। দীর্ঘদিন এই যোগাযোগটা ছিল, ওনার চোখের সমস্যার জন্য ক্রমশ সেটা বন্ধ হয়ে গেল। একটা কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলি, আমাদের কাগজের জন্য উনি চব্বিশশো টাকার চেক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আর তার আগে আমরা ওনাকে পনেরো কপি পত্রিকা রেজিস্টার্ড পার্সেল করে আমেরিকাতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, তার দামও আর একটা চেকে উনি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
বিষয় কার্টুনের পরবর্তী সংখ্যা ছিল ‘১২৫ বর্ষে যতীন্দ্র কুমার সেন’ ব্যঙ্গচিত্রী ও শিল্পী যতীন্দ্র কুমার ওরফে যতীন সেন (নারদ) মূলতঃ রাজশেখর বসুর লেখার সঙ্গে যুতসই ছবি এঁকে পাঠক সমাজে জনপ্রিয় হন, ইনি অবিবাহিত ছিলেন, আমাদের কাজের আগেই ওনার ভ্রাতুস্পুত্র লেখক চিরঞ্জীব সেনের দেহান্তর ঘটে গেছে। বন্ধুবর সৌগতের দৌলতে পরিচয় হয়ে গেল প্রেসিডেন্সী কলেজের প্রাক্তন অর্থনীতির অধ্যাপক দীপংকর বসুর সঙ্গে। যিনি রাজশেখরের দৌহিত্রী আশাদেবীর একমাত্র পুত্র। রাজশেখরের বকুলতলা রো-র সেই বসতবাড়িতে উনি থাকেন, অবিবাহিত জীবন কাটান। বেশ কয়েকদিন ধরে আমার আর সুগতর ওনার সঙ্গে সে বাড়িতে সান্ধ্য আড্ডা বসতে লাগলো। আড্ডা থেকে উঠে এলো অনেক অজানা তথ্য যার সমন্বয় করে দীপঙ্কর বাবুর একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছিল সেই সংখ্যার বিরল বিষয় পাওয়া গেল অপ্রকাশিত কিছু ছবি, পুরোনো পত্রিকা থেকে দুষ্প্রাপ্য লেখা, সব মিলিয়ে এই সংখ্যাও ‘হিট’ করে গেল। অর্থাভাবে ছাপা হয়েছিল মাত্র তিনশ কপি, দু-মাসের মধ্যেই যা নিঃশেষিত হয়ে যায়।
আমি কর্মসূত্রে মালদহ টাউনে থাকাকালীনই বের হয় ‘টিনটিনের স্রষ্টা শিল্পী হার্জের শতবর্ষ সংখ্যা’। কার্টুনিষ্ট ঋতুপর্ণ বসু কলকাতা থেকে এ সংখ্যার লেখাগুলো কুরিয়র মারফত আমাকে পাঠাতো, আমি সেগুলো এডিট করার পর আবার ওকে কলকাতায় গিয়ে দিয়ে আসতাম। তারপর কম্পোজ হতে সেগুলো চলে যেতো আমার ভাগ্নে শুভব্রতর কাছে, যে প্রথম সংখ্যা থেকে পত্রিকার কম্পোজের কাজটা করে আসছিল। হার্জ সম্পর্কে বেশ কিছু ফরাসী ভাষায় লেখা পাওয়া গিয়েছিল, ঋতুপর্ণের বাবা ফ্রেঞ্চ জানতেন বলে লেখাগুলোর পাঠোদ্ধারের কাজটা উনি করে দিয়েছিলেন। ঋতুপর্ণ টিনটিন সংক্রান্ত নানান ছবি ও স্কেচ সংগ্রহ করে দিয়েছিল। যেহেতু রঙ্গীন ছবি ছাপা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না, অনেক রঙ্গীন ছবির ফিগার সাদা-কালো স্কেচের মাধ্যমে নকল করেও দিয়েছিল। সব মিলিয়ে বিষয় কার্টুনের সেই সংখ্যা টিনটিন অনুরাগীদের কাছে বেশ পছন্দসই হয়েছিল।
এরপর রেবতীভূষণকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের ভাবনা মাথায় এসেছিল। রেবতীদা তখন প্রয়াত, সুষমা বৌদি হরিয়ানায় বড় ছেলের কাছে বাস করছেন, তাদের সাগ্রহ অনুমোদন সহজেই পাওয়া গেল। রেবতীদা বেঁচে থাকাকালীন শিল্পী দেবাশীষ দেব ওনার একটা অন্যধরণের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করেছিলেন। সেইসাথে ক্যামেরায় সেটা তুলেও রাখছিলেন, সেইসাথে ক্যামেরায় সেটা তুলেও রাখছিলেন, উনি যখন ক্যামেরা চালাচ্ছেন তখন রেবতীদার সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাবার কাজটা আমি চালিয়ে দিতাম। কয়েকটি বিরল মুহুর্ত ধরা পড়েছিল চলমান ছবিতে রেবতীদার অমূল্য স্মৃতি নিয়ে। দেবাশীষদা দুই সিনিয়র কার্টুনিষ্ট চণ্ডী লাহিড়ী ও অমল চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকারও একইভাবে ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন। যা হোক এবার আমার অনুরোধে দেবাশীষ দেব টেপ ও ক্যামেরায় তোলা সেই সাক্ষাৎকার লিপিবদ্ধ করে দিলেন। রঙ্গব্যঙ্গ রসিকেষুতে প্রথম রেবতীদার যে আত্মকথা ‘নিজেকে হারায়ে খুঁজি’ বেরিয়েছিল সেটাও ছিল ওনার সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন বা আড্ডার সারাৎসার, কারণ আক্ষরিক সাক্ষাৎকার দিতে ওঁর ঘোর আপত্তি ছিল। সংখ্যা বেরিয়ে যাবার পরও ওনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছেদ হল না, যাতায়াত চলতে লাগলো। মাঝে মাঝে মনের অর্গল খুলে দিতেন, তখন অতীত স্মৃতির টুকরোটাকরা বেরিয়ে আসতো। বাড়ি ফিরে গিয়ে সেগুলোই নোট করে রাখতাম। এখন সেই অতীতচারিতাই রূপ পেলো দীর্ঘতর এক লেখায়। তাছাড়া ওঁর আরো কিছু দুষ্প্রাপ্য লেখা, কার্টুন, স্কেচ, বই-এর অলংকরণ, আমাকে লেখা নানা সময় ওঁর চিঠির প্রতিলিপি বিষয় কার্টুনের ‘রেবতীভূষণ’ সংখ্যাকে সমৃদ্ধতর করেছিল। রেবতীভূষণের স্বাক্ষর ‘রে’ অক্ষরটুকু নিয়ে চমকপ্রদ প্রচ্ছদ তৈরি করেছিল সৌম্যেন পাল।
শিল্পী সমর দে-ও আজ এক অবজ্ঞাত শিল্পী, যাকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যার পরিকল্পনা ছিল আমার একান্ত নিজস্ব। সুগত রায়ের প্রচেষ্টায় সমর দে-র কন্যা টুলটুল মৌলিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল। শ্রী দে-র কনিষ্ঠা কন্যা মুনমুন বিশ্বাসও একজন ভালো চিত্রশিল্পী, বিবাহসূত্রে হরিয়ানায় থাকেন, সেখান থেকে ডাকযোগে তাঁর বাবার উপর একটি চমৎকার লেখা ও প্রবীণ বয়সের প্রতিকৃতি এঁকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে। সমর দে-র ছবির একটা অদ্ভুত স্টাইল আছে, ছবির প্রতিটি চরিত্রই সজীব আর চঞ্চল, ওনার আঁকা ছোট ছেলেমেয়েরা আশ্চর্য প্রাণবন্ত।
আগেই লেখা উচিৎ ছিল ‘ময়ূখ চৌধুরী’ সংখ্যার কথা। বিষয় কার্টুনের এই বিশেষ সংখ্যাটি পাঠকের কাছে বিশেষতঃ ময়ূখ অনুরাগীদের কাছে অত্যন্ত সমাদর লাভ করেছিল। কৈশোর থেকে অনেকের মতো আমিও ময়ূখের রোমাঞ্চকর কমিকস ও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির ভক্ত, আশ্চর্য্য গতিময় সব ছবি, তেমনি কাহিনির উত্তেজনা। প্রথম কোনো বাঙ্গালী কমিকস শিল্পীকে নিয়ে কাজ হল ও একটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে প্রায় হারিয়ে যাওয়া শিল্পীকে ফিরিয়ে আনা হল ছবি ও লেখার মাধ্যমে। ময়ূখ সংখ্যার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সন্দেশ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, আমার পূর্ব-পরিচিত দেবাশীষ সেন। সত্যজিৎ রায় ও সন্দেশ পত্রিকার সঙ্গে ময়ূখের সম্পর্কের একটা রসায়ন এর মূলে কাজ করেছিল। মনে আছে ময়ূখ সম্পর্কে একটা পুরোনো লেখার কপি জোগাড় করতে পাণ্ডুয়া যাত্রা করতে হয়েছিল, যেতে হয়েছিল বোলপুরে, বোলপুরের বাসিন্দা তরুণ শিক্ষক সৈকত শোভন পাল, ময়ূখ অনুরাগী মানুষটি নিজেও ছবি আঁকেন ও লেখালেখি করেন। তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের রেশ এখনও চলে যায়নি, পরেও বেশ কয়েকবার বোলপুর গেছি। বিভিন্ন ময়ূখ অঙ্কিত গ্রন্থচিত্র ও নিজের একটি তথ্যবহুল লেখা দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করেছিল সৈকত। একই সময় পাশে পেয়েছিলাম গ্রন্থপ্রেমী ও গ্রন্থ সংগ্রাহক দেবশীস গুপ্তকে। সমর দে সংখ্যা বের করা হতই না ওনার সহযোগিতা না পেলে। পুরোন শিশুসাথী পত্রিকা ঘেঁটে উনি সমর দে-র কয়েকটি লেখার হদিশ দিয়েছিলেন। এবার ময়ূখ সংখ্যা হবে জেনে উনি খুব উৎসাহী হয়ে প্রয়োজনীয় কয়েকটি বই ও নিজের লেখা প্রবন্ধ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সুগতর মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল ময়ূখের আর্ট কলেজের সহপাঠী অমিতাভর সঙ্গে। দেবাশীস সেন ময়ূখের প্রায় সমস্ত লেখা ও কমিকসের পর্যালোচনা করে দীর্ঘ লেখা উপহার দিয়েছিলেন।
সুগত রায়ের অনেকদিনের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে শিল্পী খালেদ চৌধুরীর উপর একটি সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। খালেদ চৌধুরী এক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। চিত্রশিল্পীতো বটেই, বাংলা নাটকের মঞ্চসজ্জা রূপায়ণের দক্ষ রূপকার, লোকসঙ্গীতের সংগ্রাহক ও বিশেষজ্ঞ, নিজেও সঙ্গীতশিল্পী, নানান বাদ্যযন্ত্রের উপর অসাধারণ দখল। এই রকম মানুষের সবদিককে তুলে ধরা আমাদের ক্ষুদ্র পত্রিকার পক্ষে অসম্ভব। তাই ঠিক করেছিলাম শুধুমাত্র ওনার চিত্রশিল্পের দিকটাই এই সংখ্যায় তুলে ধরা হবে। বাংলা বইয়ের জগতে খালেদদার প্রচ্ছদগুলির অধিকাংশই আমাদের মনে বিস্ময় ও সম্ভ্রমের উদ্রেক করে। বইয়ের বিষয়টিকে একটি প্রচ্ছদের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করতেন এই মানুষটি অথচ প্রথাগত শিল্পশিক্ষা বা লেখাপড়া কোনটাই তাঁর ছিল না। খালেদ সংখ্যার কাজ করতে গিয়ে সংস্পর্শে এসেছিলাম প্রদীপ দত্ত ও কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তের। একনিষ্ঠ খালেদ গবেষক ও সংগ্রাহক এই প্রদীপ দত্ত হলেন খালেদদার খুব কাছের মানুষ। আমার প্রত্যাশা মতো সহযোগিতা করেছিলেন প্রদীপ বাবু, সংখ্যাটি রূপায়ণে ওঁর সহৃদয় ব্যবহারও আমাকে উৎসাহিত করেছিল। বহরমপুর নিবাসী তরুণ শিল্পী কৃষ্ণজিতের সঙ্গে পরিচয় হওয়াটাও আমার সেসময়ের পরম প্রাপ্তি। তাঁর একটি তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল সেই সংখ্যায় এবং সেই থেকে আমি কৃষ্ণজিতের ‘বিশ্বদা’ হয়ে গেছি। সংখ্যাটির ছাপা হওয়া প্রথম সংখ্যাটি বার্ধক্য নিপীড়িত শ্রদ্ধেয় শিল্পীর হাতে তুলে দেবার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল। এর কিছুকাল পরেই অসামান্য মানুষটির জীবনাবসান হয়।
বিষয় কার্টুনের এখন পর্যন্ত শেষ সংখ্যা প্রতুল চন্দ্র বন্দ্যোপাধায়কে নিয়ে। ছেলেবেলা থেকে অবাক ভালোলাগা নিয়ে যাঁর ছবি দেখেছি। কি সাদাকালো কি জলরং-এর আশ্চর্য জাদুতে মুগ্ধ হয়েছি, সেই শিল্পীর জন্মশতবর্ষ প্রায় অজান্তে চলে গিয়েছে ২০০৩ সালে, মৃত্যুর পর কেটে গেছে দীর্ঘ চল্লিশ বছর। সংখ্যাটি বের করার পর টের পেলাম অনেক মানুষের মত সেই ভালোলাগা কৈশোরের স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে। বিশেষ সমাদর পেয়েছিল কাজটি এবং উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার কলকাতার কড়চা বিভাগে। সুগত রায় ও নাট্য নির্দেশক পঙ্কজ মুন্সীর যোগাযোগে পাওয়া গিয়েছিল প্রতুল চন্দ্রের একমাত্র পুত্র প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ, যিনি নিজেও একজন চিত্রশিল্পী। প্রসাদবাবু পরম সমাদরের সঙ্গে আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন, কিন্তু ওনার কাছ থেকে প্রতুল বাবুর ছবি বা বই কিছুই পাওয়া গেল না, তবে পাওয়া গেল বহু পূরাতন হলদে হয়ে যাওয়া একটি এক্সারসাইজ খাতা, যার পাতায় প্রতুলবাবু নিজের জীবনের কাহিনী লিখতে শুরু করেছিলেন — ওনার শৈশব থেকে তরুণ বয়সের সূচনায় গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত। শেষে মৃত্যু এসে মানুষটির কলমের চলা তথা জীবনের পথ চলা থামিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে আলাপ হয়ে গিয়েছিল উদ্যমী যুবক শান্তনু ঘোষের সঙ্গে যার কথা পরে বলবো। ওর মাধ্যমে দেখা ও কথা হল ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। খুব বিনীত স্বভাবের মানুষটির নেশা শিশুসাহিত্যের পুরোন বই, কমিকস ইত্যাদি সংগ্রহ করা। দেব সাহিত্য কুটিরের অনেকগুলি পূজাবার্ষিকী ও বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের ছবি উনি নিজে স্ক্যান করে দিলেন। অনুরূপ সহযোগিতা পাওয়া গেল চন্দননাগরিক দেবাশীস গুপ্ত ও সন্দেশের দেবাশীসের কাছ থেকে। দুই দেবাশীসের দেওয়া ছবিতে সংখ্যাটি বেশ ভালো ডকুমেন্টারীর মর্য্যাদা পেয়েছিল।
মোটামুটি এই হল কার্টুন ও ছবিকে ভালবেসে আমার এতদূর আসার গল্প। নানা কারণে এখন বিষয় কার্টুন নিয়মিত বার করতে পারি না বলে পত্রিকার অনুরাগীদের সপ্রশ্ন অনুযোগের মুখে পড়তে হয়। আমার পত্রিকা যে এত মানুষের ভালোলাগার বিষয় হবে তা তো জানতাম না। নিছক নিজের ভালোলাগা থেকে এই কাজ শুরু করেছিলাম। বলাবাহুল্য, আমি নিজেকে লিটল ম্যাগ জগতের একজন কর্মী বলেই মনে করি, বিষয় কার্টুনকে বাণিজ্যিক দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা অনেকে বলেন, কিন্তু মনের দিক থেকে তার সায় পাই না। বিষয় কার্টুন বরং মেঠোপথেই চলুক, বাণিজ্যিক পত্রিকার ঝাঁ চকচকে পথে তার চলার দরকার নেই।
প্রায় বাইশ বছর পত্র-পত্রিকার জগত পরিক্রমার ফাঁকে পেয়েছি অনেক কিছু। নাম যশ না পেলেও আমার নামটা অনেকের কাছে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। অনেক তরুণ বন্ধু পেয়েছি যারা বই পড়েন, ভালোবাসেন, কেজো জগতের বাইরের জগতকে জানার আগ্রহও যাদের আছে। অনেকেই খুব গুণী, ভালো ছবি আঁকেন, সাহিত্য চর্চা করেন। অনেক খ্যাতকীর্তি মানুষের সংস্পর্শে এসেছি, শিখেছি অনেক কিছু। ফেলে আসা এতগুলো বছরের স্মৃতি মনে সযত্নে সঞ্চয় করে রেখেছি।
সম্প্রতি কমিকস ও গ্রাফিক্স নামক বৃহদায়তনের একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছি যে পত্রিকা আসলে আমার উদ্যোগী বন্ধু শান্তনুর মানস সন্তান। তাঁর উৎসাহের কাছে হার মেনে পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নিতে হয়েছে, কিন্তু কাজটা খুব একটা কঠিন হয়ে ওঠেনি তার কৃতিত্বও শান্তনুর। যার আর এক কৃতিত্ব প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে চলা শিল্পী নারায়ণ দেবনাথকে উপেক্ষার অন্ধকার থেকে স্বীকৃতির আলোয় নিয়ে আসা। তবে জানি না শান্তনুর আন্তরিক প্রয়াস সত্ত্বেও অবাণিজ্যিকভাবে এই ব্যয়বহুল পত্রিকা চালানো সম্ভব হবে কি না? তবে যেটা জানি সেটা আমাদের অনেক বন্ধুরা এই পত্রিকাকে ভালবেসে নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। হয়তো সেই সাহায্যের মৃদুমন্দ বাতাসেই পত্রিকাতরণী বিপরীত স্রোতেই চলবে।
চিত্র পরিচিতি : ১। বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়; ২। বিষয় কার্টুন : রেবতীভূষণ স্মরণ সংখ্যার প্রচ্ছদ; ৩। বিষয় কার্টুন : খালেদ চৌধুরী সংখ্যার প্রচ্ছদ; ৪। বিষয় কার্টুন : প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যার প্রচ্ছদ; ৫। কমিক্স ও গ্রাফিক্স : প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ।