গ্যালারি উদ্ভাসে চলছে কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তের ছবির প্রদর্শনী। দুর্গা সিরিজের সেই ছবিগুলি নিয়ে একটি আলোচনা। উদ্ভাসেরই সৌজন্যে। আলোচনা করেছেন তুহিন শুভ্র।
বর্তমানে চিত্রচর্চা ও চিত্রভাবনার প্রসার ও প্রচারে কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত একটি অতি পরিচিত নাম। মহালয়ার প্রাক্কালে শিল্পী কৃষ্ণজিৎ-এর লোক আঙ্গিকে আঁকা কুড়িটি বিচিত্র দুর্গার প্রদর্শনী শুরু হল গ্যালারি উদ্ভাসে। প্রদর্শনী চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। যে কোন লোকশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার সারল্য। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ যাপনকে আশ্রয় করেই লোক-সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। প্রান্তিক দেহাতি জীবনে এভাবেই তিথি-পার্বণে আলপনা আঁকার মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে চিত্রচর্চা। কখনও ঘরে ফসল তোলার আনন্দ ছন্দবদ্ধ যৌথতায় গান হয়ে ওঠে। লোকায়ত ধারার এই রূপটিই শিল্পীর অপার মমত্বে ছবিগুলিতে ধরা পড়েছে। তাই বেশির ভাগ ছবিতেই দুর্গা কোনও তেজস্বিনী দেবী নন। বরং মধ্যবিত্ত ঘরোয়া উমার আদলখানাই স্পষ্ট। লোকায়ত দুর্গা আমাদের ঘরেরই মেয়ে।
শিল্পীর কথায় ছবিগুলি মূলত ‘ডেকোরেটিভ’। যেহেতু মণ্ডপ সজ্জার উদ্দেশ্যেই এদের জন্ম, তাই উজ্জ্বল বর্ণ ও অলঙ্কারের প্রাচুর্যে ছবিগুলিতে ‘ফেসটিভ মুড’ আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কৃষ্ণজিৎ-এর এই সিরিজে পেন্টিং-এর গুন কম আছে বলে দর্শকের মনে হতেই পারে। কিংবা ছবিগুলিকে পেন্টিং আর পটচিত্রের মধ্যস্থতাকারী সিরিজ হিসেবেও ভাবা যেতে পারে। কেননা এর গঠনশৈলীর মূল বা শিকড়টি লোকআঙ্গিকে গ্রথিত হলেও মননের প্রসারতায় ছবিগুলি নাগরিক। কবীর সুমন যেমন গানে গানে বলেন, ‘আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন’ তেমনি শিল্পী এখানে নাগরিক পটুয়া হিসেবে শিল্পের ধর্মই পালন করে গেছেন। পটচিত্রের সরাসরি প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক শিল্পরীতি ছবিগুলিকে সমৃদ্ধ করেছে। কোথাও মধুবনি শিল্পরীতি তো কোথাও রাজস্থানী পুতুল কিংবা বাঁকুড়ার টেরাকোটা। আবার কোনও ছবিতে মনিপুরি ঢঙের প্রচ্ছন্ন আভাসটুকু লক্ষ্য করা যায়। যদিও কোনও ছবিই নির্দিষ্ট কোনও শিল্পরীতি মেনে আঁকা হয়নি। একই ছবিতে একাধিক শিল্পরীতির ছায়া পড়েছে মাত্র। ছবিগুলি দেখতে দেখতে খুব স্বাভাবিকভাবেই যামিনী রায়ের স্টাইলের কথা মনে পড়তে পারে। তবে যামিনী রায় ছবিতে ডাইমেনশান আনার জন্য মোটা এবং সরু লাইন পাশাপাশি রাখতেন। কিন্তু এখানে বিশেষ করে সিঙ্গল লাইনের আধিক্যই ছবিগুলিকে ডমিনেট করে এবং রেখার পরিসরের তারতম্য লক্ষ্য করা যায় না। পটচিত্রে রঙের প্রকৃতি অপরিবর্তিত রেখে সরাসরি ছবিতে প্রয়োগ করা হয়। রঙের মিশ্রণ ঘটে না বললেই চলে। তাই পটের ছবির এফেক্টটাও মূলত ফ্ল্যাট, মৃদু। কাগজের উপর মিশ্র রঙের ব্যবহারে শিল্পী এখানে এক-একটি ছবিতে দুর্গার এক-এক রকম রূপ ধরতে চেয়েছেন। তাই দুর্গা কোথাও গৈরিক সন্যাসিনী, কোথাও কুসুমের ন্যায় নিষ্পাপ বধু। আবার কোথাও সন্তান বেষ্টিত মমতাময়ী জননী। পরিশেষে বলা যায় রং ও রেখায় একটি নতুন চিত্রভাষার জন্ম দিতে গেলে শিল্পীর অন্তরে ও চেতনায় কতখানি অনুশীলন, নিষ্ঠা, ধ্যান, সুন্দরের আরাধনা ও লোকায়ত মমত্ব থাকা প্রয়োজন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই দুর্গা সিরিজ।
dadavai-er chhobigulo khub apon, khub nijer mone holo….r tomar lekhata pore chhobigulor samporke anek kichhu jante parlam… 17 no. chhobita sabchaite bhalo legechhe